অর্গাজম: লজ্জা নাকি সুখ, আসুন গল্পের মাদ্ধ্যমে জানি এবং জানাই শেয়ার করে

রুমি তুমি যে এরকম মেয়ে জানতাম না আমি। তোমার কি লাজ লজ্জা কিছুই নেই? সত্যি আমি ভাবতে পারছিনা। মা এরকম একটা মেয়েকে আমার জন্য কিভাবে পছন্দ করলো?" কথাগুলো অনির মানে অনীক দত্তের, তার বউ রুমেলাকে উদ্দেশ্য করে বলা।
রুমেলা মানে রুমি আর অনির বিয়ে হয়েছে এই মাসখানেক আগে। অনি লাভ ম্যারেজের বিপক্ষে, আর তাই রুমেলার সঙ্গে ওর দেখাশোনা করেই বিয়ে। ওর মায়ের বান্ধবীর মেয়ে রুমেলা। সুন্দরী, স্মার্ট রুমেলারও কোনো অ্যাফেয়ার্স ছিলো না। প্রচুর বন্ধু-বান্ধব অবশ্য ছিল। যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করা রুমেলা সমস্ত ব্যাপারে খুবই খোলা মনের ছিল। আর এ যুগের মেয়েরা খোলা মনের হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। বন্ধুদের সঙ্গে খোলাখুলি সব আলোচনা হবে, এটাও স্বাভাবিক। আর তাই বিয়ের আগে যখন ওরা সবাই বিয়ের ভালো মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা করছিল, তখন স্বাভাবিক ভাবেই সেক্সুয়াল আলোচনাও এসেছিল। ওর দু একজন বান্ধবী যাদের সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে, তারা রুমেলাকে বিভিন্ন টিপস্ দিয়েছে।

ওদের সঙ্গে আলোচনা করতে করতে অর্গাজম এর প্রসঙ্গও এসেছে। আর দাম্পত্যে এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর মধ্যে যে এতো অপরাধ বোধের কি আছে, রুমেলা তো সেটাই বুঝতে পারছিল না। বলার মধ্যে ও শুধু অনিকে এটাই বলেছিল, যে ও ওদের শারীরিক সম্পর্কে অর্গাজম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। আর তাই অনি যেন এই ব্যাপারটা একটু খেয়াল রাখে। আর তারপরেই শুরু অনীকের বাক্যবাণ। রুমি তো এটাই বুঝতে পারছিল না, ও কি এমন অপরাধ করেছে, যে ওকে অনীক এতগুলো কথা শোনাচ্ছে। শারীরিক সম্পর্কও তো একটা স্বাভাবিক জৈবিক চাহিদা। খাওয়া, ঘুম, এগুলোর মতোই। তাহলে এতো বাক্যবিদ্ধ করবার কি হয়েছে। আর তাছাড়া স্বামী স্ত্রী নিজেদের এই একান্ত গোপন সম্পর্কের সুবিধা অসুবিধা এগুলো যদি খোলাখুলি ভাবে নিজেদের মধ্যে আলোচনা না করে, এতো আড়াল করে, তাহলে সেটা কিসের দাম্পত্য।
আর তাছাড়া রুমি তো আর কোনো পরপুরুষের কাছে নিজের অসুবিধার কথা বলতে যাচ্ছে না। নিজের স্বামীকেই তো বলছে। আর রুমির ব্যক্তিগত অভিমত এ ব্যাপারে প্রত্যেকটি মেয়েরই মুখ খোলা উচিত। কতদিন আর এইভাবে লজ্জায় চুপ করে থাকবে মেয়েরা। রুমি কোথায় যেন পড়েছিলো যে ভারতবর্ষের শতকরা সত্তর শতাংশ মেয়েরা অর্গাজম এর সুখ থেকে বঞ্চিত থাকে, শুধুমাত্র চুপ করে থাকার কারণে। কিন্তু রুমি ভেবে নিয়েছে, যে ও অন্তত এক্ষেত্রে চুপ করে থাকবে না। নিজের সুখের কথা সবাই ভাবে। আর এক্ষেত্রে ওর অধিকার আছে খোলাখুলি কথা বলার অনীকের সঙ্গে।
বিয়ের পর থেকেই রুমি রোজ রাত্রে অনীককে অনেক ভাবে বলার চেষ্টা করেছে ব্যাপারটা। কিন্তু অনীক বুঝতে পারেনি, হয়তো বা বোঝার চেষ্টাও করেনি। ও নিজে প্রতিবার পরিতৃপ্ত, কিন্তু রুমেলা কি আদৌ পরিতৃপ্ত হয়েছে? এটা কখনো জানতে চেষ্টা করেনি অনীক। আজ যখন অনীক নিজে পরিতৃপ্ত হয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছে, আর রুমেলা অতৃপ্তির জ্বালায় ছটফট করছিল। তখন নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে বলে ফেলেছিল অনীককে কথাটা। ভেবেছিল অনীক বুঝতে পারবে ওর সমস্যাটা। আর সেটা সমাধানের জন্য চেষ্টাও করবে। কিন্তু অনীক যে এভাবে রিঅ্যাক্ট করবে, তা তো রুমির কল্পনারও অতীত ছিল।
পরের দিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে অনীক ওর মাকে বললো, "এরকম একটা নির্লজ্জ মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবার আগে তুমি একবার ভালো করে খোঁজ নিতে পারলে না। এই মেয়ের তো আমার মনে হয় চরিত্রেরই ঠিক নেই। শুধুমাত্র তোমার বান্ধবীর মেয়ে বলে, এভাবে চোখ বুজে বিশ্বাস করা তোমার ঠিক হয়নি মা।"
তারপর মা আর ছেলে মিলে যা নয় তাই বলে রুমিকে অপমান করতে শুরু করলো। রুমি হতবাক। কি হয়েছে একথা না জেনেই ওর শ্বাশুড়ি শুধুমাত্র ছেলের কথায় ওকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে। রুমি আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারলনা। অনীককে বললো, "আমার অপরাধটা কি যে তুমি এভাবে আমাকে অপমান করছো।"
অনি তাচ্ছিল্যভাবে ওর দিকে তাকিয়ে, ওর মাকে উদ্দেশ্য করে বললো, "জানো মা ও নাকি আমার সঙ্গে শুয়ে পরিতৃপ্তি পাচ্ছে না। এটা আমাকে জানিয়েছে কাল রাত্রিবেলা।"
রুমি আশ্চর্য হয়ে গেল ওর কালকের কথার এই মানে বের করার জন্য। ও কি বলতে চেয়েছিল অনিকে। আর অনি ওর মাকে কি বোঝাচ্ছে। এভাবে তো যে কেউ ভুল মানে বুঝবে কথাটার। আসলে রিমি বুঝতে পারছিল, শারীরিক সম্পর্কে ওর তৃপ্ত না হবার অকপট স্বীকারোক্তি অনি মেনে নিতে পারছে না। ওর ধারণা ছিল, ও নিজে তৃপ্ত তো রুমিও তৃপ্ত। আসলে নিজের এই একটু হলেও পরাজয়টা ঠিক মানতে পারছেনা ও।
নিজের মাকে বলে রুমির বাবা মাকে ডেকে পাঠালো অনীক। রুমি তো ভেবেই নিয়েছিল, জল যখন এতোটা গড়িয়েছে, আরো কতদূর যেতে পারে সেটাও ও দেখবে। নিজেদের একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্ককে যখন অনীক নিজেদের মধ্যে না রেখে, সবার সামনে তুলে ধরতে চাইছে। তখন রুমিই বা এত ভয় পাবে কেন। আর কেনই বা ও এতো সংকোচবোধ করবে। ও তো আর কোনো অন্যায় করেনি। নিজের শারীরিক অনুভূতি জানিয়েছে নিজের স্বামীকে। এতে কোনো অন্যায় অন্তত দেখতে পায়নি ও।
পরের দিন সকালে রুমির বাবা মা এলো। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভালো মা আর নিকিতাও এলো। ভালো মা আসলে অনীকের একমাত্র মাসি। সেই সুবাদে রুমির মাসি শ্বাশুড়ি। আর নিকিতা হলো ভালো মাসির একমাত্র মেয়ে। খুব ভালো মনের মেয়ে।  একটু স্পষ্ট কথা বলে বটে, কিন্তু মনের দিক থেকে রুমির ওকে খুব ভালো লাগে। রুমিরই বয়সী হবে। তাই দুজনের খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ভালো মাকেও তার মানে ডেকে পাঠানো হয়েছে। রুমির সব কথা জানানোর জন্য। সত্যি রুমি আর ভাবতে পারছে না। একটা সামান্য কথার এত বড়ো প্রতিক্রিয়া হবে।
সবাই ড্রইং রুমে বসে আছে। ঘরে পিন পড়লে আওয়াজ হবে এরকম পরিস্থিতি। আর রুমি ? কাঠগড়ায় দাঁড় করানো আসামির মতো ওর অবস্থা। শুরুটা অনীকই করলো, রুমির মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে। "কি সহবত শিখিয়েছেন মেয়েকে, যে লজ্জা শরমের ধারে কাছে আসে না। এতো বড় নির্লজ্জ মেয়ে আগে জানতে পারলে তো এই বিয়েটাই হতো না।"
রুমির বাবা মা অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছেনা জামাইয়ের কথার অর্থ। মাথা নিচু করে বসে আছে দুজনে। ভাবছিলো কে জানে মেয়ে হয়তো কোনো বড়ো অপরাধ করে ফেলেছে। রুমির খুব কষ্ট হচ্ছিল ওর বাবা মাকে দেখে।
ভালো মাসি এবার বললো, "অতো ভণিতা না করে সোজাসুজি বল অনি কি হয়েছে ব্যাপারটা"।
ভালো মাসির কথার উত্তরে অনির গলার স্বর আরো তীব্র হলো। বললো, "সব বলবো ভালো মা, সেজন্যই তো ডেকে পাঠিয়েছি তোমাদেরও"।
নিকিতাও বললো, "কি হয়েছে সেটা বলবি তো দাদাভাই। এতো টেনশন কেন দিচ্ছিস।"
নিকিতার কথায় অনীক শুরু করলো, "তবে শোন্, তোর বৌদি নাকি আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে পরিতৃপ্ত হচ্ছে না। এরকমই কথা ও কাল রাত্রিবেলা আমাকে বলেছে।"
কথাটা শুনে রুমির মা বাবা লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে ছিলো। ভালো মাসি বললো, "এ আবার কি রকম কথা। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কে তৃপ্তি অতৃপ্তির কি ব্যাপার আছে। আর এসব কথা নিজের স্বামীকে বললে, সে তো খারাপ ভাববেই। তোমার এভাবে কথাটা বলা উচিৎ হয়নি রুমি।"
বেচারা রুমি তো এটাই বুঝতে পারছিল না, এই কথাটা আর অন্য কিভাবে বলা যেতো। নিজের এই ব্যাপারে অতৃপ্তির কথা সে নিজের স্বামী ছাড়া আর কাকেই বা বলতে যাবে। নিকিতা এতক্ষণ সব শুনছিল চুপ করে। হঠাৎই ও অনীককে বললো, "দাদাভাই সত্যি করে বলতো, বৌদি তোকে ঠিক কি বলেছে?"
এবার অনীক বললো, "আর শুনে কাজ নেই। যতোটা শুনেছিস ওটাই যথেষ্ট নয় কি?"
নিকিতা উত্তরে বললো, "না যথেষ্ট না। আমি পুরো কথাটা শুনতে চাই"।
এবার অনি বললো, "বড়দের সামনে এসব কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধছে"।
"কিন্তু দাদাভাই কথাটা তো তোকে বলতেই হবে। বৌদিকে যখন তুই খারাপ, নির্লজ্জ এইসব বলেছিস, তখন তোর এই অভিযোগ কতটা সত্যি, সেটা তো আমাদেরও জানতে হবে।" নিকিতা বেশ জোরের সঙ্গেই কথাগুলো বললো অনিকে।
অনি তখন বললো, "তাহলে শোন, তোর বৌদি আমাদের শারীরিক সম্পর্কে অর্গাজম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। এরকমই কথা বলেছে আমাকে।"
নিকিতা এবার হেসে ফেললো। বললো, "সত্যি তুই পারিস দাদাভাই। একটা সামান্য কথার এত বড়ো মানে করে ফেললি তুই।আর তাও এই যুগের ছেলে হয়ে। তোর তো নিজেকে ভাগ্যবান মনে করা উচিৎ, যে রুমি তোকে এই কথাটা সাহস করে বলতে পেরেছে। তোর উচিত এব্যাপারে ওকে সাহায্য করা। অন্ততঃ আমি তো তাই মনে করি।"
এতক্ষণ নিকিতা আর অনির কথাবার্তা বাড়ির বড়রাও শুনছিল। ভালো মাসি নিকিতাকে জিজ্ঞেস করলো, "এটা আবার কি জিনিস রে নিকিতা। অর্গাজম আবার কি?"
অনীক সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, "তোমাদের জানতে হবে না ওসব।"
কিন্তু নিকিতা বললো, "কেন দাদাভাই। এতোটা যখন শুনলো ওরা, পুরোটাই জানিয়ে রাখ। ওরাও বুঝুক বৌদি কোনো গর্হিত অপরাধ করেনি। এবারও নিকিতাই শুরু করলো, "অর্গাজম মানে হচ্ছে শারীরিক মিলনের চূড়ান্ত পর্যায়, চূড়ান্ত পরিতৃপ্তি।  বৌদি দাদাভাইকে এটাই বলতে চেয়েছে যে, ও এই পর্যায় অবধি পৌঁছাতে পারছে না। আর তাই দাদাভাই যেন একটু খেয়াল রাখে ব্যাপারটা। এটা ওরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই মিটিয়ে নিতে পারতো। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো মেয়েরা এইসব আলোচনা করবে, তাদের শারীরিক তৃপ্তি অতৃপ্তির কথা খোলাখুলি ভাবে বলবে, এটা দাদাভাইয়ের মতো অনেকেই মেনে নিতে পারে না। তারা মনে করে, বিয়ের পর শারীরিক সম্পর্ক শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের জন্য। এটাও যে একটা স্বাভাবিক জৈবিক চাহিদা, এটা অনেকেই মেনে নিতে পারেনা। আর দাম্পত্যের এই অতি প্রয়োজনীয় ,আর স্বাভাবিক চাহিদাটাকে স্বামী স্ত্রী দুজনেরই সমান ভাবে উপভোগ করা উচিৎ। শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্য না, নিজেদের সম্পর্কের ভিতকে মজবুত করবার জন্যও শারীরিক সম্পর্ক সমান গুরুত্বপূর্ণ। এবার বুঝতে পারলে তো সবাই, যে বৌদি কোনো খারাপ, নির্লজ্জ মেয়ে না। বরং অনেক অনেক ভালো মেয়ে। দাম্পত্যের এই স্বাভাবিক সম্পর্ককে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মিটিয়ে নিতে চেয়েছিল। নিজেদের সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করতে চেয়েছিল।"
এতক্ষণ রুমি নিকিতার সমস্ত কথা শুনছিলো। আর ভাবছিলো এটা তো ওরই মনের কথা। ও নিকিতাকে জড়িয়ে ধরে বললো, "অনেক ধন্যবাদ তোমাকে আমার পাশে থাকার জন্য। আমাকে ভুল না বোঝার জন্য। আর আমাকে এতবড় একটা অপবাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। আর স্বামী স্ত্রীর দৈহিক সম্পর্ককে এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য।"
ঘরে উপস্থিত সকলের মুখে এতক্ষণে হাসির রেখা দেখা দিলো। রুমির মা বাবাও বুঝতে পারল যে, তাদের মেয়ে কোনো অপরাধ করেনি। আর অনীক ? এতো বড় সিনক্রিয়েট করার পর আর কিভাবে থাকবে এখানে। বললো, "আমি যাচ্ছি। অফিসে কাজ আছে"।
আর নিকিতা তার আদরের বৌদির গাল দুটো ধরে জিজ্ঞেস করলো, "কি স্পেশাল ব্রেকফাস্ট বানাবে আজ এই ননদিনীর জন্য। আর হ্যাঁ, লাঞ্চে কিন্তু মাটন কষা রান্না করতে হবে।"
রুমি একগাল হেসে বলল, "তাই হবে। সবাই লাঞ্চ করে তবেই বাড়ি যাবে। আমি নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবো সবাইকে।"
                                                       

Post a Comment

0 Comments